মানুষের জীবন যাপনের উন্নতির সাথে সাথে বেড়েছে পলিথিনের ব্যবহার। নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্র, খাদ্য পণ্য ও মোড়কজাতকরনে ব্যবহৃত হচ্ছে পলিথিন। এই পলিথিন উৎপাদন ও ব্যবহার যতটা সহজ ততটাই কঠিন এটিকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা। কিন্তু খুশির সংবাদ হলো, বর্তমানে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাট থেকে উৎপন্ন সেলুলোজ থেকে পলিথিন ব্যাগ আবিষ্কার করা হয়েছে যা শতভাগ পরিবেশবান্ধব।পাট থেকে পলিথিন ব্যাগ উদ্ভাবন করেছেন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ জুটমিল কর্পোরেশনের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ড. মোবারক আহমদ খান। এ ব্যাগের নাম দেয়া হয়েছে ‘সোনালী ব্যাগ’। উদ্ভাবক দাবি করেছেন, পাট থেকে তৈরি পলিথিন ব্যাগ প্রচলিত পলিথিনের তৈরি ব্যাগের চেয়ে অধিক কার্যকর। এ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করার পর ফেলে দিলে সহজেই মাটির সঙ্গে মিশে যায়। উপরন্তু তা মাটিতে সারের কাজ করে। সহজলভ্য উপাদন এবং সাধারণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি এ পলিথিন ব্যাগ বিদেশে রফতানির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা ইউএনইপি থেকে ‘বিশ্বের প্লাস্টিকের ব্যবহার পরিস্থিতি’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়েছে, প্রতিদিন প্রায় ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ছে। পরিমাণের দিক থেকে এটি বিশ্বে পঞ্চম। সামুদ্রিক প্রাণী ও উদ্ভিদের ব্যাপক ক্ষতির কারণ হচ্ছে এই প্লাস্টিক। প্লাস্টিকের পণ্যে বিপিএ নামে একধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকে। পানির বোতল বা খাবারের পাত্র থেকে তা মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে। এতে ক্যানসারের ঝুঁকিসহ সন্তান জন্মদানের ক্ষমতাও ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।
পরিবেশবান্ধব পাটপণ্যের ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্যে ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এই আইন অনুযায়ী ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার, চিনিসহ ১৯টি পণ্য সংরক্ষণ ও পরিবহনে পাটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু এসব পণ্যে এখনো ব্যাপকভাবে প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে। যদিও নির্ধারিত পণ্যে পাটের বস্তার ব্যবহার নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়। আইন লঙ্ঘনের দায়ে অনেক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করা হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। মূলত প্লাস্টিকের পরিবেশদূষণ বা ক্ষতি সম্পর্কে আমাদের সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। পাড়ার মুদি দোকান থেকে শুরু করে হাট-বাজার পর্যন্ত সর্বত্রই পলিথিনের ছড়াছড়ি। ব্যবহারের পর সেগুলো যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হয়। সেগুলো ড্রেনে গিয়ে জমা হয়, ড্রেনে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। কয়েক বছর আগে বুড়িগঙ্গায় খননকাজ চালাতে গেলে দেখা যায় এর নিচে ১০ ফুট উঁচু পলিথিনের আস্তরণ তৈরি হয়েছে। দেশব্যাপী কৃষিজমির উর্বরতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারপরও প্লাস্টিক ব্যবহারে এবং যত্রতত্র ফেলে দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের অভ্যাসের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।
তাই পলিথিনের বিকল্প হিসেবে সোনালী ব্যাগ এর উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ভূমিকা রাখবে। যা একইসাথে পরিবেশবান্ধব ও দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সহায়ক হবে।
মো.মাহামুদুল হাসান সাজিদ, অনার্স ১ম বর্ষ, প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়