Uncategorized

মিনি চিড়িয়াখানায় একটি দিন

প্রায় ১০ বছর ধরে সাভারে আমি আমার পরিবারের সাথে বসবাস করছি। কিন্তু সত্যি বলতে সাভারের যে চিড়িয়াখানা রয়েছে সেখানে কখনোই যাওয়া হয়নি।তাই ইচ্ছে ছিল এই বছর সাভারে অবস্থিত মিনি চিড়িয়াখানা ঘুরতে যাব। ঈদের তৃতীয় দিন সকাল বেলায় চিড়িয়াখানায় ঘুরতে যাওয়ার উদ্দ্যেশে বের হলাম আমি আর আমার ছোট বোন। সাভার বাসস্ট্যান্ড থেকে মিনি চিড়িয়াখানার দূরত্ব প্রায় ৫.৪ কি.মি। বাস থেকে নেমে রাস্তা পার হয়ইে দেখলাম চিড়িয়াখানার প্রবেশ পথে বড় করে লেখা ”অরণ্যালয়”। প্রবেশ করার পর আরো পাঁচ মিনিটের দূরত্বে চিড়িয়াখানাটি অবস্থিত। সেনাবাহিনীর তত্ত¡াবধানে চলছে চিড়িয়াখানাটি। জঙ্গলের ভেতর দিয়ে আকাঁ বাকাঁ রাস্তা চলে গেেছ চিড়িয়াখানা পর্যন্ত। চলতে চলতে রাস্তার দুই পাশের মনোমুগ্ধকর সবুজ পরিবেশ দেখে কংক্রিটের শহরে বসবাসের ক্লান্তি দূর হয়ে গেল। হাঁটতে হাঁটতে চিড়িয়খানায় পৌঁছে গেলাম।চিড়িয়াখানার প্রবেশদ্বারের আগে একটি ঘাট বাধানো বড় পুকুর এবং দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে নৌকা ভ্রমনের ব্যবস্থা। এছাড়া নামায পড়ার জন্য রয়েছে একটি মসজিদ ও প্রবেশদ্বারের মুখে টিকিট কাউন্টারের পাশে ছোট একটি দোকানও রয়েছে।আমরা কাউন্টার থেকে দ্ইুটি টিকটে কিনে চিড়িয়াখানার ভিতর প্রবেশ করলাম। ভিতরে প্রবেশ করে দেখলাম সুন্দর বসার জায়গা ও শিশুদের জন্য রয়েছে দোলনা।এরপর সামনে এগিয়ে প্রথমে দেখতে পেলাম বেশ কয়কেটি চিত্রা হরিণ।চিত্রা হরিণের পাশের খাচায় ছিল সাম্বার হরিণ। আমার জীবনে এই প্রথম সাম্বার হরিণ দেখার অভিজ্ঞতা হল। এদের প্রকৃত আবাসস্থল হল বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, ফিলিপাইন, চীন, নিউজিল্যান্ড। তারই একটু সামনে পাশাপাশি দুইটি খাঁচার একটিতে সজারু আরকেটতিে রয়েছে কতগুলো গিনিপিগ। সামনে এগিয়ে দেখি পুকুরের পাশ ঘিরে হাসের খামার এবং তার বামে যেতে দেখলাম কবুতর ও ময়ুর। কবুতর দেখতে দেখতে হঠাৎ ময়ূরের ডাক শুনে তাকিয়ে দেখি একটা ময়ূুর পেখম মেলে ডাকছে। কি যে সুন্দর সে দৃশ্য তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। এর পাশে ছিল আমার খুবই পছন্দের প্রানী বানর। আর যখন দেখলাম এগুলো রেসাস বানর, তখন আমার আগ্রহ আরো বেড়ে গেল। বইতে পড়েছিলাম রেসাস বানরের মাধ্যমে লোহিত রক্ত কনিকায় যে অ্যান্টিজেন পাওয়া যায় তা মানুষের রক্ত কনিকাতেও আছে, যার সাহায্যে রক্ত পজেটিভ নাকি নেগিটিভ তা জানা যায়। বানরের পাশের খাঁচায় ছিল বিশাল আকৃতির একটা কালো ভাল্লুক। আরো ছিল অজগর, ভূটানি গরু, যমুনাপাড়ি ছাগল, হ্যাম্পশায়ার ভেড়া, দেশি মুরগি, টার্কি মুরগি, খরগোশ, ময়না। এর পাশে ছিল ঘোড়া এবং এখানে ঘোড়ায় চড়ার ব্যবস্থাও ছিল। তারপর বেশ কিছুটা হঁেটে সামনে এগোতে দেখি একটি বড় অজগর। পশুপাখি ছাড়াও আরো রয়েছে একটি মাশরুম উৎপাদন কেন্দ্র ও শিশুদের জন্য ছোট একটি পার্ক। এছাড়াও পুরো চিড়িয়াখানাটি মাটির তৈরি বিভিন্ন পশুপাখি ও ফুলগাছ দিয়ে সাজানো। করোনা মহামারির জন্য দু’বছরের বদ্ধ জীবনের যে ক্লান্তি তা এই ছোট্ট ভ্রমণের মাধ্যমে ও প্রকৃতির এতো কাছে এসে দূর হয়ে গেছে। সাভারের অল্প সংখ্যক বিনোদন কেন্দ্রের মধ্যে মিনি চিড়িয়াখানাটি একটি বিনোদন কেন্দ্র ও শিশুদের জন্য শিক্ষনীয় স্থান। কিন্তু সাভারে এর জনপ্রিয়তা তেমন নেই। চিড়িয়াখানাটির সঠিক পরিচর্যা, নজরদারি ও প্রচারে এটি হয়ে উঠতে পারে নগরীর একটি জনপ্রিয় বিনোদন কেন্দ্র।

 

সযৈ়দা সুরাইয়া জাহান আন্নী
অর্নাস ৩য় র্বষ
সাভার সরকারি কলজে